Thursday, June 20, 2024

আমার ছোটবেলা , পার্ট এক

আমরা দিল্লিতে আসি এলাহাবাদ থেকে l আমি বড়, আমার পরে ভাই তারপর বোন, তিনজনই এলাহাবাদে জন্মাই l
বাবা চাকরি সূত্রে প্রথমে একা যায়,সবে ভারত স্বাধীন হয়েছে l বাবা ব্যাচেলর মেস যেটা অনঙ্গ বোস চালাতেন গোল মার্কেটে সেখান থাকা শুরু করে l বাবা মজা করে বলতো রবিবারে মাংস হত যেটা কে বাবারা বলতো লেদার ডে, যাকে বলে বোকা পাঁঠার মাংস l
তারপর মার সংগে আমরা তিন ভাই বোন বাবার কাছে আসা, যদ্দুর মনে হয় 1948 নাগাদ হবে !
তখন আমরা টিমারপুরে থাকি কয়েক মাস, সেখান থেকে গোল মার্কেট , তার পর মিন্টো রোড l
মিন্টো রোডে আসার আগে আমরা সিমলায় বাবার সঙ্গে যাই l আমার তৃতীয় ভাই দিল্লিতে জন্মায়, আবছা আবছা মনে আছে আমাদের সিমলার দিনগুলো l
তখন গরমে সেন্ট্রাল গভর্মেন্ট সিমলা শিফট করতো, বাবার সেন্ট্রাল গভর্মেন্ট এ চাকরি তাই আমরা সিমলায় l
জ্যাকো পাহাড়ে যাওয়া মনে আছে l মনে আছে আমাদের ছোট পিসির আমাদের কাছে সিমলায় আসা l
বেস কিছু পুরনো ছবিতে আমি আর আমার ভাই অমু সিমলায় l
এখনো মনে আছে সেই কাঠের বাড়ীতে আকাশ ভেসে এসে ঢোকা l এখন মন হয় ওসব সপ্ন l
মিন্টো রোডের দিন গুলো বেশ স্পষ্ট মনে আছে l বোন মিনু আর তৃতীয় ভাই যাকে আমরা ভাই বলে ডাকি খুব ছোট l
আমাদের ছোট ভাই যার ডাক নাম বুদু ওই মিন্টো রোডে থাকার সময় জন্মায় l
আমরা প্রেস রোডে থাকতাম ভাড়ায়, সেই বাড়ির দুই ছেলে সুনীল আর অশোক বোলতে গেলে আমাদের ভাইয়ের মত l সব মিলিয়ে আমরা ছ ভাই এক বোন হয়ে গেলাম l আমাদের বোন ঐ ছয় ভাই কে ফোনটা দিত l
5 নম্বর প্রেস রোড এখনও স্মৃতির কোঠায় যত্ন করে রাখা l
আমি আর আমার ভাই কাছেই একটা টিনের চাল বলা ঘরে তখতি নিয়ে স্কুলে যেতাম, খাগের কলম দিয়ে তাখতি তে লেখা আবার সেটা খড়ি দিয়ে পোঁছা l
ওই স্কুলে, a b c , নামতা রপ্ত হয়েছিল, ঐ সময় ঐ হিন্দি স্কুলে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে অমরা পাহাড়া মানে নামতা মুখস্ত করতাম l বাবা আমাকে ক্লাস 1 ইউনিয়ন একাডেমী স্কুলে ভর্তি করে l এটা তখনকার নাম করা স্কুল,ওখানে ভর্তি করার কারণ ওই স্কুল ও গরমে সিমলায় শিফট করতো, বাবাকে আবার যদি সিমলা যেতে হয় কিন্তু তখন ঐ সিমলায় গরম গভর্মেন্ট অফিস শিফট হওয়া বন্ধ হয়ে যায় l
তখন দিল্লি কে বলা হতো সিটি অফ সাইকেলস, সবাই অফিস সাইকেলে যেত, সাইকেলের জন্য আলাদা রাস্তা ছিল মেইন রোডের  পাসে পাসে l বাবাও সাইকেলে অফিস যেত, প্রাইভেট গাড়ি খুবই কম লোকের কাছে ছিল l দূরে কোথাও যেমন ট্রেন ধরতে যাওয়ার সময় অমরা টাঙ্গা নিতাম l 
আমি পাঁচ বছর বয়স থেকে সাইকেল চালাতে শিখি,ওই বাবার সাইকেলে কাঁচি মেরে, মানে হাফ প্যাডেল l
মনে আছে প্রথমে স্কুল বাসে যেতাম, বাসটা দেখে মনে হত কয়েদিদের নিয়ে যাচ্ছে ! আমাদের পাড়ার আমার বন্ধু গোপাল,টুনু এরা হেঁটে ওই স্কুলেই যেত l
আমি বাবাকে বললাম আমিও ওদের সঙ্গে হেঁটে যাব l
মিন্টো রোড থেকে Connaught place হয়ে স্কুল হবে 4 কিলোমিটার l হ্যাঁ ওই বয়স থেকে লম্বা হাঁটা শুরু l মন্দ লাগতোনা ফেরার সময় যখন তাড়া নেই,আর অমরা দল বেঁধে Connaught Placer ওই রাজশাহী দালান দিয়ে হাঁটা,ঝক মকে দোকান গুলোকে উঁকি মেরে দেখা,ওই 50 এর দশকে তেমন কোন ভিড় হত না l আমাদের মত ছাপোষা মানুষ ওই সব দোকানে তখন ঢোকার সাহস করতো না l রাস্তা ঘাটে তেমন গাড়ি ঘোড়া ছিলো না, একে বারে ছিম ছাম l
কিন্ত Connaught Place তখন থেকে আমার কাছে একটা হারিয়ে যাওয়ার জায়গা l
প্রতি রবিবারে Connaught প্লেসের মাঝ খানে একটা চত্বর ছিল যেখানে বিকেলে ব্যান্ড বাজতো, মনে হয় আর্মি ব্যান্ড l রবিবার Connaught প্লেস বন্ধ, মানে দোকান পাঠ বন্ধ ,সব বন্ধ l ঐ ঝম ঝাম ব্যান্ডের আওয়াজ ওই বড় বড় থমওয়ালা ঘোরা প্যাসেজে আছড়ে পড়ত,সে এক মায়াবী পরিবেশ l আমরা বাড়িতে না বলে চলে আসতাম, তখন ক্লাস 2 l আমি, টুনু আর গোপাল  !
এখন ভাবলে হাঁসি পায় যে এক দল ক্লাস 2 বা 3 র ছেলে হৈ হৈ করে ওই রকম সফিস্টিকেটেড জায়গা Connaught প্লেস এর মধ্যে যাচ্ছে ,এখন অবশ্য পাতি পয়সা বালা লোকদের ভিড়, যে রকম হয় আজকাল কাঁচা টাকা হাতে !
প্রথম 26 জানুয়ারি 1950 এ রিপাবলিক ডে কুচ কাবাজ মিন্টো ব্রিজের কাছে বসে দেখা এখন মনে পড়ে,তখন ক্লাস 2!
Dussehra র সময় পাড়ার হিন্দুস্তানি বাচ্চারা হনুমান সেজে রামলীল গ্রাউন্ডে যেত যেখানে দিল্লির সব চে বড় রামলীলা হয়, হনুমান সেজে গেলে ঢোকার জন্য টিকিট কাট তে হত না, আমরা রাস্তার পাসে দাঁড়িয়ে ওদের মুখে রং,প্যান্ট থেকে লেজ আর হাতে রাঙতার গদা দেখে হাঁসা হাঁসি করতাম আর জানতাম কিছু দিন পর দুর্গা পূজা!
আমাদের পাড়ায় একটা হিরো মার্কা আমদের চেয়ে বড় সন্তোষ বলে হিন্দুস্তানি ছেলে ছিল যাকে আমরা তোশি বলতাম l একদিন শুনলাম তার এক্টিং নাকি কোন বম্বের ডিরেক্টরের ভালো লেগেছে,সে বোম্বে থেকে যখন ফিরল তখন ত সে স্টার, সেই প্রথম এক জন জন ফিল্ম স্টার কে কাছে থেকে দেখলাম l মনে হয় ফিল্মটা ছিল হাম পাঞ্ছি এক ডাল কে !
দিল্লির রাস্তা ভর্তি জাম গাছ, টুনু দের কোয়ার্টারের সামনে জাম গাছ,ওই গাছের ডালে বসে আড্ডা দিতাম , আড্ডার বিষয় ডিটেকটিভ গল্পো, টুনু আর আমি কল্পনায় কত রহস্য সলভ করেছি ওই গাছে বসে l আমাদের দুজনের মধ্যে হেমেন রায়, নিহার গুপ্তর বই আদান প্রদান হত l বাবা টুনু কে পছন্দ করত না l বাবা বলত ওর সঙ্গে ঘুরলে আমি খারাপ হয়ে যাবো, খুব দুরন্ত আর খুব ভাল ফুটবল খেলত,আর সব সময় বাড়ির বাইরে l 
মিন্টো রোডের দুর্গা পুজো তখন কার দিনে খুব নামকরা ডেকরেশনের জন্য,আর পুজোর চারটে দিন ষষ্ঠী থেকে নবমী তিনটে করে সারা রাত বাংলা সিনেমা প্যান্ডেলে,বেশ কয়েকটা ভালো সিনেমা ঐ ছোট বয়সে দেখা, অবশ্য তখন সব বুঝতাম না l
আমি যখন ক্লাশ 3 তখন বাবা গোল মার্কেটে কোয়ার্টার পায়, চামেরিতে,ক্লাস 3 এ আমার স্কুল বদলানো হয় l আমার মেজো ভাই তখন ভর্তি হয়েছে ডাইরেক্ট ক্লাস 2 তে রাইসিনা স্কুলে l আমিও রাইসিনা স্কুলে ভর্তি হই l
চামেরির গল্পো আরেক দিন !
আমাদের পরিবার তখন
বাবা স্বর্গীয় রবীন্দ্র নাথ রায়
মা স্বর্গিয়া সুষমা রায়
আমি বড়
মেজ ভাই   অমরেন্দ্র নাথ রায়
বোন মিনতি মুখার্জি
সেজো ভাই স্বপন রায়
ছোটো ভাই চন্দন রায় 
বন্ধুরা
সুনীল সুনীল দে
অশোক অশোক দে
টুনু।  কৃষ্ণমূর্তি চ্যাটার্জি
গোপাল  গোপাল চ্যাটার্জি 
এক গোঙ্গা ছেলে মাঙ্গে 

3 comments:

Sukhen Mukherjee said...

Sundor atmajiboni

Sabyasachi Chowdhury said...

জন্মদিনে বাল্যকালের সুখ স্মৃতি রোমন্থন পরম উপভোগ্য। পড়তে পড়তে আমিও পোঁছে গেছিলাম সেই সময়ে, দিল্লীর আপনাদের বাসা ও কনয়ার্ট প্লেসে, খুব ভাল লাগল। শুভ জন্মদিন। আপনার দীর্ঘ জীবন কামনা করি।

samaranand's take said...

ধন্যবাদ সুখেন, সব্যসাচী কমেন্টের জন্য!