Saturday, February 01, 2025

ন্যায়বিচারের ডানা:রমেশের লড়াই




এটা ছিল একটা অলস রোববারের বিকেল। আমি আর সমরানন্দ বসে আছি আমাদের পছন্দের ক্লাবে, গড়িয়াহাটের কাছে। এই ক্লাবটা আমাদের জন্য একটা রিল্যাক্স করার জায়গা, যেখানে চা আর কলকাতার সেরা চিকেন কাটলেট খাওয়া যায়। সমরানন্দ, তার তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক আর সমস্যা সমাধানের নেশা নিয়ে, এখানে প্রায়ই আসে। আমিও আসি। আমাদের কথাবার্তা প্রায়ই তার সমাধান করা মজার কেস নিয়ে ঘোরে, আর আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

কাটলেটের কামড় দিতে দিতে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "তো, সমরানন্দ, দিল্লিতে গিয়ে কোনো নতুন কেস সলভ করেছ? তুমি তো সবসময় চমকপ্রদ গল্প নিয়ে ফিরে আসো।"

সে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে, ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে বলল, "আহ, হ্যাঁ। একটা কেস ছিল, যা সত্যিই অসাধারণ। এটা ছিল অদ্ভুত, প্রায় অবিশ্বাস্য। একটা ভুল পরিচয়ের কেস, একটা ডোপেলগ্যাঙ্গার, আর এত গভীর বিশ্বাসঘাতকতা যে আমাকে **অবাক** কোরে দিয়েছিল।"

আমি আরও জানতে চাইলাম, "বলো, কী হয়েছিল?"

সমরানন্দ চায়ের এক চুমুক নিয়ে শুরু করল, "এটা শুরু হয়েছিল যখন দিল্লিতে , রমেশ যাকে আমি চিনিনা, আমার কাছে আসে। সে তখনই দেওহরাদুন জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, ভুলভাবে ধরা পড়ার পর। কিন্তু বাড়ি ফিরে দেখে, তার জীবন চুরি হয়ে গেছে—একজন মানুষ, যে দেখতে তারই হুবহু, তার জায়গা দখল করে নিয়েছে।"

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, "ডোপেলগ্যাঙ্গার? এটা যেন কোনো থ্রিলার গল্পের মতো শোনাচ্ছে।"

সমরানন্দ মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ। কিন্তু এই কেসটাকে আরও চমকপ্রদ করে তুলেছিল কয়েকটা পায়রা, একটা চাকরের বিশ্বাসঘাতকতা, আর একটা চতুর পরিকল্পনা, যা শুধু একটা মাস্টারমাইন্ডের কাজই হতে পারে।"

তার গল্প বলার সাথে সাথে আমি নিজেকে রমেশের অভিজ্ঞতার মোড়ে মোড়ে হারিয়ে ফেললাম। এটা ছিল একটা প্রতারণা, বিশ্বাস আর সত্য প্রকাশের অপ্রত্যাশিত উপায়ের গল্প।

---
**পায়রার সূত্র**

সমরানন্দ বলতে থাকল, "রমেশের একটা বিশেষ অভ্যাস ছিল। সে প্রতিদিন সকালে তার বাড়ির কাছে পায়রাদের খাবার দিত। সময়ের সাথে সাথে পায়রারা এতটাই নির্ভীক হয়ে উঠেছিল যে তারা তার কাঁধে বসত। কিন্তু যখন সে বাড়ি ফিরল, তখন দেখল যে পায়রারা এই নকল রমেশকে এড়িয়ে চলছে। তারা বুঝতে পেরেছিল যে সে আসল রমেশ নয়।"

আমি **অবাক** হয়ে বললাম, "পায়রারা বুঝতে পেরেছিল? এটা তো সত্যিই আশ্চর্যজনক!"

সমরানন্দ হাসল, "হ্যাঁ। পায়রারা রমেশকে চিনত। তারা তার সঙ্গী ছিল বছরের পর বছর। যদি তারা এই নকল রমেশকে এড়িয়ে চলে, তাহলে এটাই প্রমাণ যে সে আসল রমেশ নয়।"

---

 **পরিকল্পনার প্রকাশ**

কয়েক দিন ধরে, বাবুলাল নকল রমেশের উপর নজর রাখল। সে রিপোর্ট করল, "এই লোকটা খুবই চালাক। সে রমেশের বাড়িতে পার্টি করছে, প্রতিবেশীদের ডাকছে। প্রতিবেশীরা বিনি পয়সায় মদ পে খুবই খুশি ,কিন্তু সে খুব সতর্ক—বাড়ি থেকে বেশি দূরে যায় না।"

এদিকে, আমার ভাগনে সৌম্য, যার টেকনোলজিতে দক্ষতা অসাধারণ, সে নকল রমেশের মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে ফেলল। "পেয়ে গেছি!" সৌম্য উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল। "এখন আমরা তার কল আর মেসেজ ট্র্যাক করতে পারব।"

মোবাইল নম্বর পেয়ে আমরা একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরকে নিয়োগ করলাম। ইনভেস্টিগেটর জানালেন, "এই লোকটা রমেশের পরিচয় ব্যবহার করে লোন নিচ্ছে আর দামী জিনিস কিনছে। এটা একজন প্রফেশনাল। এর আগেও সে এমন কাজ করেছে।"

---

 **চাকরের বিশ্বাসঘাতকতা**

বাবুলাল লক্ষ্য করল যে রমেশের চাকর, ধন বাহাদুর, নকল রমেশের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ। "এরা সবসময় ফিসফিস করে কথা বলে," বাবুলাল রিপোর্ট করল। "এটা মনে হচ্ছে যেন তারা একসাথে কোনো পরিকল্পনা করছে।"

আমরা ধন বাহাদুরকে জেরা করলাম। বাবুলাল তাকে কোণঠাসা করে বলল, "আমরা জানি তুমি এই পরিকল্পনায় জড়িত। সত্য বল, নাহলে আমরা পুলিশে রিপোর্ট করব।"

ধন বাহাদুর ভেঙে পড়ল। "হ্যাঁ, এটা সত্য," সে স্বীকার করল। "আমি পুরো পরিকল্পনাটা করেছি। আমি রমেশকে ভুলভাবে গ্রেপ্তার করিয়েছি যাতে আমি বৈকুণ্ঠকে তার জায়গায় বসাতে পারি। রমেশ কখনই নিয়মিত শেভ করত না, তাই তার মতো দেখতে একজনকে খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল। বৈকুণ্ঠ রাজি হয়েছিল এই ভূমিকা পালন করতে, আর আমি নিশ্চিত করেছি যে প্রতিবেশীরা কিছুই সন্দেহ করবে না।"

---

 **পায়রার পরীক্ষা**

আমরা পায়রাদের ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এক সকালে, রমেশ আর আমি তার বাড়ির কাছে দাঁড়ালাম, যেখানে বৈকুণ্ঠ পায়রাদের খাবার দিচ্ছিল। পায়রারা উড়ে এল, কিন্তু রমেশের কাঁধে বসার বদলে তারা দূরে সরে গেল। কিছু পায়রা উড়ে চলে গেল।

প্রতিবেশীরা, যারা এই দৃশ্য দেখতে জড়ো হয়েছিল, **অবাক** হয়ে বলল, "এটা তো অদ্ভুত! পায়রারা তো রমেশকে খুব ভালোবাসত। তারা আজ তাকে এড়িয়ে চলছে কেন?"

রমেশ এগিয়ে গেল, তার কণ্ঠ দৃঢ়। "কারণ আমি আসল রমেশ। এই লোকটা একজন নকল। পায়রারা সত্য জানে।"

বৈকুণ্ঠ নার্ভাস হয়ে হাসল, "এটা কি হাস্যকর! আমি আসল রমেশ। এই লোকটা প্রতারক!"

কিন্তু প্রতিবেশীরা বিশ্বাস করল না। "পায়রারা মিথ্যা বলে না," একজন প্রতিবেশী বলল। "তারা সবসময় রমেশকে বিশ্বাস করত। যদি তারা তোমাকে এড়িয়ে চলে, তাহলে তুমি সে নও।"

---

 **সমাপ্তি**

পুলিশ বৈকুণ্ঠ আর ধন বাহাদুরকে গ্রেপ্তার করল। রমেশের পরিচয় ফিরে পেল, আর সত্য প্রকাশ পেল: ধন বাহাদুর পুরো পরিকল্পনাটা করেছিল রমেশের সম্পত্তি আর জীবন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।

রমেশ আমাদের ধন্যবাদ জানাল। "তোমাদের সাহায্য ছাড়া আমি কী করতাম জানি না," সে বলল, চোখে **জল** নিয়ে। "তোমরা আমাকে আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছ।"

আমি হাসলাম, "এটাই তো বন্ধুর কাজ, রমেশ। শুধু আগামীকালের জন্য সতর্ক থাকবে।"

আর পায়রারা আবার রমেশের কাঁধে বসতে শুরু করল, আর জীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এল। ডোপেলগ্যাঙ্গারের কেসটা শেষ হয়েছিল, কিন্তু ধন বাহাদুরের বিশ্বাসঘাতকতা রমেশের বিশ্বাসে একটা গভীর দাগ রেখে গেল।

--


No comments: