Friday, May 31, 2024

পর্বতারোহী






আমি উদগ্রীব হয়ে ডায়েরিটা পড়ছিলাম, কালকেই  আমার সহাকারী বাবুলাল এটি দিয়ে গেছে l ও ঐ ডায়েরীটা একজন বোট চালকের থেকে পেয়েছে যখন ও বেনারস যায়,মনে হয়ে বিদেশী টুরিস্ট ওটি ভুলে ফেলে গেছে! নাম লেখ Liam Johansson, সুইডেনবাসি l

ডায়েরি তে লেখা
...........



আমি পাহাড়ের ফাটলের মধ্যে ঝুল ছিলাম। গভীর অন্ধকারে তলা দেখা যাচ্ছে না, আমি সাহায্যের জন্য উপরে তাকালাম, তুষারঝড়ের মধ্যে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না; আমি নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য তৈরি । স্লাইড শোয়ের মতো, আমার পুরো পুরনো জীবন মনের স্ক্রীনে মুহূর্তের জন্য ভেসে উঠলো l
নিক্কাদুকতায় আমার স্কুলের দিনগুলি থেকে শুরু করে এবং কিরুনায় মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং  কলেজের দিনগুলি, সুইডেনের সবচেয়ে উঁচু পর্বত কেবনেক্সে আমার আরোহণ অভিযান, আমার ব্যর্থ বিয়ে এবং অবশেষে আমার এই  পাহাড়ের চড়ার চেষ্টা, সেই দুর্গমএভারেস্ট।

      আমার ব্যাকপ্যাক যাতে ছিল  সিলিন্ডার সহ আমার অক্সিজেন মাস্ক ছিঁড়ে আমার পিঠ থেকে পড়ে গেছে সেই গভীর ফাটলে। আমি অক্সিজেনের জন্য হাঁপাচ্ছিলাম, আমি তখন আমার ক্লাইম্বিংএর স্পেশাল ক্রস বেল্টের সাহায্যে ঝুলে ছিলাম যা আমার পর্বতারোহণের দড়ি দিয়ে আমার পর্বতারোহণের কুড়ালের সাথে বাঁধা ছিল। আমি চিৎকার করে বললাম, "হেল্প হেল্প!" বৃথা চিৎকার করা,কে শুনবে?
আমি অনুভব করলাম দড়ি ক্রমশ নিচের দিকে পিছলে যাচ্ছে, আমার মৃত্তু নিশ্চিত্ , কুড়াল আমার ওজন আর নিতে পারছে না, আমি চোখ বন্ধ করলাম, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না কিন্তু আমার জীবনের সেই শেষ সেকেন্ডে আমি আশা করতে শুরু করলাম অলৌকিক ঘটনা যা আমাকে বাঁচাবে!
আমি একটা ঝাঁকুনি অনুভব করলাম, আমি দেখলাম আমি ধীরে ধীরে উপরে যাচ্ছি, অবশেষে ঈশ্বর সাহায্য পাঠিয়েছেন বা তিনি নিজেই এসেছেন। আমি এই অলৌকিক ঘটনাটি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমি হ্যালুসিনেশন করছিলাম নাতো, আমি কোথাও পড়েছি যে মৃত্যু যখন খুব কাছে আসে তখন মানুষ সব ধরণের ইতিবাচক জিনিস কল্পনা করতে শুরু করে। আমি কিছু প্রায় মৃত্যুর কাছের অভিজ্ঞতা পড়েছি যেখানে তাদের যেন কোন দেবদূত একটি গুহার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, গুহার শেষে জ্যোতি।
আস্তে আস্তে আমিও উপরের দিকে একটা আবছা আলো দেখতে পেলাম, দড়িটা আস্তে আস্তে আমাকে উপরের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমিও আমার ক্লাইম্বিং বুট ফাটলের রাখলাম এবং আমার শরীরকে একটু সামনের দিকে ঝোঁকালাম যাতে আমি উপরে ওঠায় আমার  শক্তি লাগাতে পারি। ব্যাস আর কিছুই মনে নেই!আমি অজ্ঞান হয়ে যাই!
যখন আমি আমার চোখ খুললাম, চারি দিকে অন্ধকার কিন্তু আমি  স্বচ্ছন্দে শ্বাস নিতে পারছি। আমি বুঝতে পারলাম যে আমার মুখে অক্সিজেন মাস্ক ; আমি ওঠার চেষ্টা করলাম কিন্তু একটা হাত আমাকে উঠতে বাধা দিল। হাতের মালিক আমার পায়ের চেট, হাতের তালু মেসেজ করছিল; আমি বুঝতে পারলাম সে আমার রক্ত ​​চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। আমি উঠতে চেস্টা করলাম যে সেই অপরিচিত লোকটাকে দেখতে যে আমার জীবন বাঁচিয়েছে নাকি আমি এখন আমি মৃত এবং পরকালের স্টেশনে অপেক্ষা করছি স্বর্গে  কিংবা নরকে যাবার আগে?
আমি  মনে করার চেষ্টা করছিলাম কি করে আমি ওই ফাটলে পড়ি l
আমি সকালে লোহতসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ক্যাম্প 2 থেকে বেরিয়ে এলাম। এটি ছিল 8000 মিটারে লোহতসের পাদদেশে বরফের প্লেন জায়গা। আমাদের সাথের পর্বতারোহীরা  লোহতসে চড়ার জন্যে বেরিয়ে গিয়েছিল। লোহৎসের তুষার শিখরটিতে অস্তগামী সূর্যের রশ্মিতে ঠিকরে বর্ণময় রঙের প্রদর্শনের  একটি মন্ত্রমুগ্ধকর দৃশ্য । আমাকে বলা হয়েছিল যে এখান থেকে পাহাড়ে আরোহণটি বেশ খাড়া এবং মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের চেয়ে আরও বেশি আরোহণের কৌশল প্রয়োজন। গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল তাই আমি আমার শেরপার সাথে পরিকল্পনা করেছিলাম পরের দিন ক্যাম্প 1 এ আরোহণ করব এবং তারপর এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণের চেষ্টা করব। আমাদের আগেই কিছু দল এভারেস্ট আরোহণের উত্তেজনায় দ্রুত এগিয়ে গেছে। পর্বতারোহীদের একটি দীর্ঘ সারি চূড়ান্ত আক্রমণের চেষ্টা করছিল। বেস ক্যাম্পে, আমাদের বলা হয়েছিল যে 2017 সালের সেই বছরে নেপাল সরকার দক্ষিণ দিক থেকে এভারেস্টে আরোহণের করার জন্য প্রায় 3580 টি দলকে লাইসেন্স জারি করেছিল, মৃত্যুর হার 1.2 শতাংশ ,লোক সাহসী হয়ে উঠেছে percentage কম দেখে। আশ্চর্যের কিছু নেই যে ক্যাম্প 2-এ এতগুলি তাঁবু ছিল। বেশিরভাগ ভারতীয় পর্বতারোহী স্পন্সেরে আসে , একজন পর্বতারোহী আমাকে বলেছিল যে সে  30 থেকে 40 লক্ষ ভারতীয় টাকা সংগ্রহ করেছিল স্পন্সরদের কাছ থেকে। আমিও আমার সরঞ্জামের জন্য কিছু বাণিজ্যিক সংস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছি সুইডেনে কিন্তু বেশিরভাগই আমার নিজের টাকা । আমার ভেঙ্গে যাওয়া বিয়ের মানসিক চাপ থেকে বাঁচবার জন্য আমি এই ট্রিপ নি, এমনিতেই সুইডেনে সব পাহাড় চড়া ।
     যখন আমি লোহটসের দিকে যাচ্ছিলাম তখন আমি আমার সমস্ত ক্লাইম্বিং গিয়ার নিয়ে এগোচ্ছি। আমার শহর নিক্কাদুকতার তাপমাত্রা মাইনাস 30 ডিগ্রিতে নেমে যায় তাই তখনকার মাইনাস 18 এর তাপমাত্রা  আমার জন্য খুব বেশি ছিল না। আমি দেখেছিলাম কিভাবে ভারতীয় পর্বতারোহীরা টন টন ভারি পশম পরেছিল।
একা হাঁটতে হাঁটতে কতদূর চলে গেছি খেয়ালই করিনি। মে মাসে আমি কোন তুষারপাত বা তুষারঝড়ের আশা করিনি  কিন্তু তারপরে হঠাৎ তুষারঝড় হল এবং এটি এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে আমি হোঁচট খেয়ে সেই জঘন্য ফাটলে পা দিয়েছিলাম। আমি তাড়াহুড়ো করে আমার পর্বতারোহণের কুড়ালটি ফাটলের ঠোঁটে আঘাত করেছিলাম এবং আমার আরোহণের দড়ি দিয়ে নিচে পড়েছিলাম, আমার অক্সিজেন মাস্কটি ছিঁড়ে যায়।

ডায়েরিটি এতোদূর পড়ে আমি আমার রাতের টেবিলে  রাখলাম এবং আরোহীর দুঃসাহসিক কাজ সম্পর্কে ভাবতে লাগলাম, বাহ, এটি বেশ লোমহর্ষক গল্প।
বাবুলালকে মনে মনে ধনবাদ দিলাম এই মূল্যবান ডায়েরিটি জোগাড় করায় l

আমি এলোমেলোভাবে ডায়েরিটি খুলেছিলাম, পড়তে শুরু করেছি, এটি আমাকে চুম্বকের মত আঁকড়ে রেখেছিল।  পরের দিন মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের জন্য ডিসকভারি চ্যানেল দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। জন হান্টের লেখা দ্য অ্যাসেন্ট অফ এভারেস্ট ছিল আমাদের দিল্লি উচ্চ মাধ্যমিক কোর্সের সাইড বুক, আমি সুইডেনএর ওই পর্বত আরোহীর এক্সপেরিয়েন্স সঙ্গে তাই relate করতে পারছিলাম।
বাকি অংশ পরে পড়বো বলে রেখে দিলাম।
নিঃসন্দেহে এভারেস্টে চড়া একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ আর পয়সা খরচের ব্যাপার আছে, এই তো সেদিন আলাপ হলো এক মাউন্টেনিয়ারিং পাস করা একজনের সঙ্গে,সে বেস ক্যাম্প অব্দি টুরিস্টদের নিয়ে যায়, বেস ক্যাম্প 6000 মিটার ওপরে, ও আমাকে হিসেব দিচ্ছিল ওখান অব্দি যাবার, প্রায় 3 থেকে 4 লাখ টাকা লাগে, আমাকে ওখানে যাবার প্রলোভন দিচ্ছিল l বলছিলো বেস ক্যাম্প পৌঁছাবার আগে বেশ কিছু homestay র সঙ্গে ওদের ব্যবস্থা আছে, সুন্দর সব সিন সিনেরি!বাবা আমর এই বয়সে ওখান ওঠার জন্য দেহে শক্তি নেই কিন্তু মনের বল আছে!
আমি বিছানায় শুতে শুতে ভাবছিলাম ওই হাতটি যেটা Liam কে টেনে তুলেছে ।
রহস্যময় সাহায্যের হাত সম্পর্কে জানবার জন্য পরের দিন ডায়েরির বাকি অংশটি পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ওটা কি ইয়েতি ছিল নাকি ঈশ্বর?

No comments: