ক্যামেলিয়া হোটেলে আমি ,শ্যামল আমাদের বন্ধু দ্বিজদাসের সঙ্গে গল্প গুজব কিছু খোয়া দাওয়া l সময় টা 1997 যখন আমি প্রতি মাসে শান্তিনিকেতন যেতাম বক্রেশের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রিভিউ করতে l প্রজেক্টে যাওয়া, তারপর শান্তিনিকেতনে একটা চক্কর , দ্বিজ আমাদের জন্য অপেক্ষা করত l দ্বিজ আমার ছোটবেলার বন্ধু l ও আমার সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে দিল্লির রাইসিনা স্কুল থেকে l
ঐ 1997 এ দ্বিজ তখন শান্তিনিকেতনের রেজিস্ট্রার l সেই জন্য আমাদের কোনো অসুবিধে হয় নি রবীন্দ্র ভবন ঘুরে দেখা l
ঘুরতে ঘুরতে ভাবতাম দ্বিজ বেশ আছে ওই রকম এক শান্ত পরিবেশ l হিংসে হত l
যা বলছিলাম ঐ ক্যামেলিয়া হোটেলে আড্ডা দেওয়া l আমি বললাম “দ্বিজ বেশ আছ, এই রকম গাছ পালার মধ্যে “
ও হেঁসে উঠলো আর বললো ও রকম মনে হয়, আমার এই নিস্তরঙ্গ জীবনে তোমরা এলে একটু তরঙ্গ আসে l
আমি অবাক, এ যেন নদীর ওপার সকলের মনে হয় এপারের চেয়ে বেশী সবুজ l
দ্বিজ আমাদের স্কুলের সকালের প্রার্থনা টা আবৃত্তি করত l
চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত,যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারা রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি,
ইত্যাদি
ওই রকম রিভিউ মিটিং র জন্য একবার আমাদের ডিরেক্টর লাহড়ি সাহেব এসে ছিলেন, আমরা যথা রীতি ওনাকে নিয়ে শান্তিনিকেতনে যাওয়া, দ্বিজর সঙ্গে আলাপ করানো l
আমি বললাম ও আমাদের স্কুলে সকালের প্রার্থনা করত l
রবীন্দ্র ভবনের বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব কথা হচ্ছিল, তখন রবীন্দ্র নাথের আসবাব পত্র, পাণ্ডুলিপি, মিউজিয়াম ইত্যাদি দেখা হয় গেছে l
ঐ বাইরের বারান্দায় দরজার দু পাশে চিত্ত যেথা কবিতা টা ইংরাজি আর বাংলায় লেখা l
দ্বিজ কে অনুরোধ করলাম দুটোই পড়তে l
স্কুলে যখন আবৃত্তি করত তখন গলা অন্য , অতটা ভাঙ্গেনি l
কিন্ত সেদিন ও ওর দরাজ গলায় যখন দুটোই পড়লো তখন আমরা প্রায় মন্ত্র মুগ্ধ,আমার তো চোখে জল এসে গেছিল!
সেন্টিমেন্টাল হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম l
ঐ শন্তিকেতনের পরিবেশ টা আলাদা স্কুলের তুলনায় l
আমার মনের কোঠা য় এখনও ওই মুহুর্ত টা ধরা আছে, লাহিড়ি সাহেব গত হয়েছেন , দ্বিজ এখন কোথায় জানিনা, শ্যামলের সঙ্গে মাঝে মধ্যে দেখা হয় l
Retirement এর পর প্রায় প্রতি বছরি শান্তিনিকেতনে যাই কিন্তু সেদিনের পরিবেশ টা পাইনা l
এখন ওখানে যাওয়া মানে শোনাঝুড়ির হাট, সিনেমার দেখানো কোন একটা রিসোটে থাকা, খাওয়া দাওয়া আর কাঁকালীতলা যাওয়া l
কাঁকালী তলা গেটের সামনে বটতলায় মার নামে যাত্রী দের বসার জন্য একটা বেদি বানিয়ে দিয়েছিলাম, তখন গেটটা ছিল না l ওটা বাস স্ট্যান্ড l
ঐ গেটের আর্কিটেক্ট দের ধন্যবাদ যে ঐ বেদি টা পুরো ভাঙ্গে নি,
স্বর্গিয়া সুষমা রায়, বিপ্রটিকুরি লেখাটা এখনও আছে ওই বেদির ওপর ! প্রায় পঁচিশ বছর আগে মায়ের স্মৃতিতে বানিয়ে ছিলাম, আমার মামা বাড়ি বিপ্রিটিকুরি ,কঙ্ককালী তলা থেকে 7 কিলোমিটার দূরে