লেকের চারপাশে আমার সকালের হাঁটা শেষ করে, সিআরসির কাছে গেট থেকে বেরিয়ে এলাম, গোপাল গাড়ি নিয়ে আসল, আমি এক ভিখারির দিকে হাঁটা দিলাম। প্রতিদিন আমি সেই ভিখারি এবং একজন মহিলাকে কিছু টাকা দি। সে দিন সেই মহিলা আসে নি। আমি ওই ভিখারিকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। সে জানাল, "আমরা দুজনেই গতকাল এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে 500 টাকা পেয়েছি, এখন ও ওই টাকা দিয়ে বেহুঁশ কোথাও পড়ে আছে।"
"বেহুঁশ পড়ে থাকা" এই শব্দগুলি আমাকে প্রায় 20 বছর পিছনে নিয়ে গেল।তখন আমি কলকাতায় পোস্টেড ছিলাম এবং রোজ সন্ধ্যায় বাড়ির পথে সান্ধ্য ভ্ৰমনের জন্য রবীন্দ্র সরোবরে থামতাম। এটা এমনই এক সন্ধ্যা ছিল যখন আমি মেনোকা সিনেমার বিপরীতে লেকের চারপাশে হাঁটছিলাম। হঠাৎ আমি অনুভব করলাম যে কয়েকটা বদমাশ আমাকে অনুসরণ করছে, সেই সময় লেকটি এখনকার মতো ঘেরা ছিল না। আমি টের পেলাম যে ওরা ছিনতাইকারী, আমি ওই রকম এক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু হঠাৎ ট্রাউজার পরা এক মহিলার মুখ বিড়ি , চুলগুলি শক্ত করে বাঁধা খোঁপা থেকে চুলের কাঁটা কে ছুরির মত ধরে সে ঐ বদমাশদের দিকে কট মোটিয়ে তাকিয়ে বলল, “ফিরে যাও
! এনাকে ছেড়ে দাও!"
আমি থেমে গেলাম, চোখ বড় বড় করে দেখছিলাম সেই tableaux টা। আধো অন্ধকারে উন্মোচিত সেই দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। রাস্তার বাতি থেকে বিচ্ছুরিত আলো এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি করেছে! সে একজন যোদ্ধার মত ছিল তার ওজন তার বাম পায়ে ছিল এবং সামান্য সামনের দিকে বাঁক ছিল, সে তার লম্বা চুলের পিনটি টেনে নিয়েছিল এবং তার মুঠিতে ধরেছিল, আমি ভাবছিলাম এযে এক দেশি Modesty Blaise । তার এই অপ্রত্যাশিত চেহারা সেই রফিয়ানদের স্তব্ধ করে দিল, আমি পুলিশকে খুঁজতে লাগলাম। আমি পুলিশের জন্য চিৎকার করেছি কি না ঠিক মনে নেই কিন্তু পায়ের আওয়াজ এবং whistle শুনেছি। ওই বদমাশরা তাকে বাংলায় গালা গাল দিতে দিতে পালালো, তারা তাকে মুখপুড়ি বলে ডাকছিল। সে আমাকে একটি কৃতিম স্যালুট দিয়ে বাতাসে অদৃশ্য হয়ে গেল।
সেদিনের পর থেকে আমি লেকের চারপাশে আমার সন্ধ্যায় হাঁটা বন্ধ করে দিলাম। যখন আমি মেনোকাতে একটি ইংরেজি সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম তখন আমি আবার ট্রাউজার পরা সেই মহিলার মুখোমুখি হয়েছিলাম। আমি দেখতে পেলাম যে সে black এ টিকিট বিক্রি করছে, আমি বুঝতে পারি যে সে সেই সিনেমা হলের চারপাশে টিকিট বিক্রি করা সমস্ত ছেলেদের রিং লিডার ছিল। সে আমাকে চিনতে পারেনি কিন্তু আমি পারলাম, সেই দুর্ভাগ্যজনক সন্ধ্যার ঘটনাটি আমার মনে চিরতরে গেঁথে গিয়েছিল।
আমি রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে তার কাছে গেলাম, আমি টিকিট খুঁজছি ভেবে সে এগিয়ে এল।
-না, না, আমি কোনো টিকিট চাই না কারণ আমি আগে থেকে টিকিট কিনেছি কিন্তু সেই সন্ধ্যায় আমাকে বাঁচানোর জন্য আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।
সে আমার দিকে ঘনিষ্ঠভাবে তাকালো এবং তারপর নির্লিপ্তভাবে বললো, “ওহ! এটা কিছুই না! এইসব বদমাশদের কারণে এই সিনেমা হলে সন্ধ্যার শো করতেও মানুষ আসতে ভয় পায় আর মানুষ না এলে আমরা আয় করব কী করে? তাই আমি এবং আমার দল কড়া নজর রাখি!”
-সেদিন আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিতে পারিনি কিন্তু তোমার সেই কাজের জন্য তোমাকে পুরস্কৃত করতে চাই।
আমি তাকে 50 টাকা দিয়েছিলাম এবং সে অপ্রস্তুতভাবে তা গ্রহণ করেছিল।
হিন্দি সিনেমার নাম মনে নেই যার জন্য পরে আরো একবার মেনকা তে যাই , কাউন্টার থেকে টিকিট কিনেছিলাম। হলের সামনে "হাউসফুল" বোর্ড টাঙানো ছিল। চায়ের দোকানে তার খোঁজখবর নিলাম। চায়ের দোকানের ছেলেটি বলল, তুমি মুখপুড়ি কে খুঁজছ, সে গতকাল বেশ কিছু টাকা আয় করেছে কারণ এই সিনেমা হিট হয়েছে, সে এখন মদ খেয়ে বেহুঁশ!”
ইতিমধ্যে, আমি বদলি হয়েছি এবং তারপর অবসর নিয়েছি, আমার মেনোকা সিনেমা হলে যাওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না, 8 বছর আগে লেকের চারপাশে আমার মর্নিং ওয়াক শুরু না করা পর্যন্ত তাকে দেখিনি।
কিন্তু যখন আমি সেই ভিক্ষুক মহিলাকে প্রথম দেখলাম যার মুখে এবং হাতে সাদা ছোপ রয়েছে আমি এক মুহুর্তের জন্য হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম কারণ আমি সেই মুখটি কোথাও দেখেছি। আমি আমার ড্রাইভার গোপালকে তার সম্পর্কে জানতে বললাম।
পরে গোপাল আমাকে জানায় যে সে সেই মুখপুড়ি মেয়ে যে এখন পাগলী নামে পরিচিত, বিশ বছর আগে সে মেনোকা সিনেমা হলের ডনের মতো ছিল, থিয়েটারের সিনেমার টিকিটের কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণ করত।
আমি অবশ্যই তাকে সেদিনের কথা মনে করিয়ে দিইনি তবে প্রতিদিন তাকে টাকা দিতে শুরু করেছি। সে এখনও তীক্ষ্ণ, সে আমার গাড়ি চেনে এবং যখন সে আমাকে লেকের গেট থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে সে গোপালকে গাড়ি নিয়ে আসার জন্য আদেশ কণ্ঠে ডাকে। আমি তাকে গেটে গার্ড এবং পুলিশ সদস্যদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। এমনকি কটূক্তির মধ্যেও সে সর্বদা হাসিমুখে থাকে এবং সেই হকার, ড্রাইভার, গার্ডদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে থাকে।
এরই মধ্যে গোপাল গাড়ি নিয়ে এলো এবং আমি ভিতরে উঠলাম, জানালা দিয়ে পাগলির ফাঁকা জায়গার দিকে তাকালাম এবং মুখপুড়ির প্রাণবন্ত তরুণ মুখের সাথে তা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম যা আমি 20 বছর আগে দেখেছিলাম।
2 comments:
Wonderful experience
Samar apnar sathe sobjayga te kichu na kichu goonda der interaction hoi
Post a Comment