Sunday, May 12, 2024

ভূতের ভয়


সকলের অল্প বিস্তর ভূতের ভয় আছে, কেউ স্বীকার করে আবার কেউ করেনা l যেমন আমি ছোট বেলাতে প্রচুর ভূতের ভয় ছিল l
গরমের ছুটিতে যখন মামার বাড়ি বীরভূমের বিপ্রটিকুরি তে যেতাম দিল্লি থেকে সেখানে মনে হত রাতে যেনো আনাচে কানাচে ভূত আছে l একেবারে অজ পাড়া গাঁ পঞ্চাশের দশকে, বিদ্যুৎ আসে নি,হ্যান্ড পাম্প কিম্বা কুয়োর জল, পুকুরে চান, পুকুর পাড়ে শৌচ ইত্যাদি l
দিল্লি থেকে বাংলার ঐ অজপাড়াগাঁ মানে যেন মঙ্গল গ্রহে যাওয়া l কিন্তু আমরা ভাই বোনরা ওখানে যাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করতাম l বিউলির ডাল, পোস্ত আর ভাত যেনো অমৃত সংগে কখনও কখনও ছোটো চারা পোনা l
যা বলছিলাম ভূত নিয়ে আর আমার ভূতের ভয়, মা ছিল খুবই সাহসী,আমার মেজো ভাইয়ের ভূতের ভয় টয় ছিল না,বাবা নির্বিকার l ঐ গ্রামে মা দাঁড়িয়ে থাকত রাত্তিরে আমি যখন বাড়ির বাইরে পেচ্ছাব করছি তাল গাছের তলায় l মামার বাড়ির উল্ট দিকে একটু দূরে এক পোডো বাড়ি, ভয়ে রাত্তিরে আমরা ওদিকে তাকাতাম না ! অনেকে নাকি ওখানে রাত্তিরে ভূত দেখেছে, আমি কিম্বা, ভাইরা,আমাদের মামারা কেউ দেখেনি l শোনা কথা, তবে রাত্তিরে ওখানে কারুকে যেতে দেখিনি l মামার বাড়ির কাছেই থাকত নির্মল যাকে আমরা নির্মালামামা বলতাম, একটু ডানপিটে, ও সন্ধের অন্ধকারে উদয় হত, তাই আমার ওকে মনে হত খুব সাহসী l ওকে দেখলে শরৎ বাবুর শ্রীকান্ত বইয়ের ইন্দ্রনাথ কে মনে পড়ে যেত l শ্রীকান্ত আর ইন্দ্রনাথের রাত্তিরে নৌকো চড়ে আন্নাদাদির কাছে যাওয়া, যাবার সময় যত রকমের ভূতের হাত ছানি, শ্রীকান্ত ভয় কুঁকড়ে যাওয়া আর ইন্দ্রানাথের বেপরওয়া ভাব l
ক্রমশ অবশ্য ঐ ভূতের ভয়টা কমলো খড়গপুর আইআইটি তে হোস্টেল একা রুমে থাকতে থাকতে l
কিন্ত এলাহাবাদে যখন আইআইটি থেকে ফেরার পথে 5/6 দিনের ব্রেক জার্নি করতাম ঠাকুরমার সংগে সময় কাটাবার জন্য তখন ওপর তলায় জেঠিমার সংগে থাকতাম, রাত্তিরে সিঁড়ির সংগে লাগোয়া প্যাসেজে খাট পেতে বাইরে গরমে শুতাম , ভেতরে পাখার হাওয়া অসজ্জ গরম ! রাতের অন্ধকার আমি একা আর সামনে নিম গাছ, শুনেছি নিম গাছে ভূত থাকে, অমি গাছের দিকে তাকিয়ে আছি, মনে হচ্ছে কি যেনো আছে, পৈতে তে হাত দিয়ে গায়ত্রী পড়তে লাগলাম আর কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম মনে নেই l আমি অবশ্য জেঠিমা কিম্বা কারুকে বলিনি, বোলতে গেলে আমার এটা প্রথম শিকরক্তি, বা বোলতে গেলে আমার ভূতের অনুভব পাওয়া!
চাকরি ইন্ডিয়ান অয়েলে শুরুতে, প্রথমে গৌহাটি রিফাইনারি আর তার পর 11 বছর বারাউনি রিফাইনারি l অবাক হলাম দেখে যে বেশির ভাগ আমার বিহারী বন্ধুরা ভূত বিশ্বাস করে এবং রিতি মত ভয় পায় l আমার সংগে ব্যাডমিন্টন খেলত এক অপারেটর ভার্মা সেতো খেলেই সাইকেলে করে পোঁপা বাড়ির দিকে,আমি ওকে হিন্দিতে বলতাম তোর সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে ভূত বসে আছে, ও আমাকে রিকোয়েস্ট করতো ভূতের নাম না নিতে l আমরা যখন ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট খেলতে মুঙ্গের যাই তখন আমরা তিন জন একি রুমে থাকি !
রাত্তিরে ও বললো," চলো রাত মে নহি সোতে!"
আমি হেসে উঠলাম," পাগল হয় ক্যা!"
তখন বললো, " তব হম লোগ লাইট জলা কে শোয়েঙ্গে!"
আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়েছিলাম তখন মুঙ্ঘেরে l
তবে এখনও কখনো কখনো গা ছম ছম করে l
বারাউনিতে পাওয়ার প্ল্যান্টের শিফট ইচার্জ হিসেবে রাতে একা টহল দিতে হত , টারবাইন হল, বয়লার কন্ট্রোল রুম, বয়লার ওপর থেকে নিচে, শিঁড়ি বে বে অপারেটর সজাগ আছে কিনা দেখা l রাত্তিরে বেশির ভাগ গল্পো অপারেটরদের ভূত দেখা, ঐ সব আগেকার মরে যাওয়া অপারেটর এখনও টহল দেয়! সবার কাছে হনুমান চালিশা, আমিও রেখেছিলাম আমার ড্রয়ারে l
প্রসাদ যে আমার কাছে ইলেকট্রিক্যাল ইনচার্জ ছিল সে আমায় বলতো রিফাইনারি বাইরে খোলা মাঠে অদ্ভুত লাইট ঘোরা ফেরা করতে দেখেছে l
অমি জিগেশ করলাম ওগুলো কি ভূত? ও বললো না ওগুলো পরি! নাও ঠেলা এদ্দিন জানতাম ভূত বলে এক বস্তু কে সবাই ভয় পায় এই পরি আবার কোত্থেকে এলো l
আমি জীবনে কোন দিন মড়া পড়াতে যাই নি, ঐ বারাউনিতে প্রথম l কে কে ভার্মার বাবা কে মোকামা ঘাটে পোড়াতে, গঙ্গার ধারে l বলে মড়া পোড়াতে যাওয়া পুন্নির কাজ l পোড়ানোর পর পুরুত বলল, "পিছে মুড় কে নহি দেখনা ভূত পিছা লেগা l" এটা তো জানতাম না, তাহলে কোন একটা এক্সকিউজ দিয়ে দিতাম ! তখন আমার বিয়ে হয় নি, একা টাউনশিপ ফ্ল্যাটে থাকতাম l স্কুটার চালিয়ে ফ্ল্যাটে ফিরলাম পিছনে না তাকিয়ে l খুব জোর বেঁচে গেছি ভূতের হাত থেকে l 
আমি অবশ্য শিফটে ভূত টুত দেখিনি তবে অপারটের দের জাগিয়ে রাখার জন্য ভয় দেখাতাম !
শুনেছিলাম বাংলার নেতা সুব্রত মুখার্জীর খুব ভূতের ভয় ছিল, রুমে একা শুতো না l
আমার কাছে ভূত সম্বন্ধে একটা প্রশ্ন ঘোরা ফেরা করে! কেউ যখন মরে ভূত হয় তখন কি রকম দেখতে যে বয়সে মারা গেছে সে রকমে নাকি ধরা যাক আমি যাকে ছোট বেলায় দেখেছি আর পরে দেখা হয় নি তবে আমার কাছে এসে তো ঐ ছোটবেলার চেহারা নিয়ে দেখা দেবে,আবার হয়ত যারা জোয়ান বয়সে দেখেছে তারা জোয়ান দেখবে l বেস গোল মেলে ব্যাপার এই ভূত দেখা l
কিন্তু কোন কোন রাত্তিরে মনে হয় ঘরে কেউ আছে !
অস্ট্রেলিয়াতে আমার ছেলের চেনা sharon বলে একজন আছে যার মা এখন মারা গেছেন তিনি নাকি যে কোনো মানুষের চোদ্দপুরুষ কে দেখতে পেতেন তাদের যার ওনার কাছে পরকালের এডভাইস নিতে যেত  .
সব নাকি পর পর লাইন দিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে l
কি জানি ওখানে হবে হয়ত কারণ মানুষ কম তাই ভূতের থাকার জায়গা আছে,আমাদের তো 140 কোটির দেশ মানুষের থাকার জায়গা নেই,তার ওপর রঙ্গিয়া,ভূত থাকবে কোথায়?

3 comments:

Shovabazar amit said...

We have many a crooked spirit in our minds. They manifest in peculiar forms in our imaginations

Amaresh Chowdhury said...

Fantastic Sir

samaranand's take said...

Thanks Amit and Amaresh for your comment!