Thursday, March 31, 2022

কমল, ভালপাহাড় ও আমি

কমল, ভালপাহাড় ও আমি আমি একটা কর্পোরেট অনুষ্ঠানে গেয়েছিলাম এই বছর আটেক আগে।কলকাতার এক নামকরা হোটেল এর banquet হল। আমার লেকচার ছিল।সবাই রীতিমত অফিস পোষাকে ছিল শুধু একজন বাদে। আমি একটু অবাক হলাম সাদা দাড়িবালা খদ্দরের পাঞ্জাবি ধুতি আর ঝোলা।দেখে ভাবলাম Mr Rath যিনি organise করেছেন তাঁর কোন ধর্ম গুরু হবেন, যোগা টগা নিয় হয়তো জ্ঞান দেবেন। যথা রীতি প্রোগ্রাম প্রদীপ জ্বালিয়ে শুরু হল। বক্তারা নিজেদের বক্তব্য রাখলেন।আমিও আমার ভাষণ দিলাম, আমি তৈরি ভাষণ দি না, তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী তখন বানিয়ে ফেলি। শেষে ঐ দাড়িবালা ভদ্রলোক উঠলেন, পরিচয় দেয়া হল ডক্টর কমল চক্রবর্তী ভাল পাহাড় থেকে, উনি একটা স্কুল চালান গরিব বাচ্চাদের জন্য পুরুলিয়া তে। সাদা সাপ্টা ভাষায় বাংলা ইংরেজি হিন্দি ।মিশিয়ে লেকচার। বর্ণনা দিলেন কি ভাবে 200 টা বাচ্চাদের পড়াশুনা খাওয়াদাওয়া ওষুদ পত্তর ইত্যাদি ওনার সংস্থা দিনের পর দিন দিচ্ছে। তাছাড়া এক অনুর্বর জমি যেখানে কোন গাছ ছিল না সেখানে তখন 6 লাখ এর ওপর গাছ লাগিয়েছেন।ভাবা যায় না। আমি অবাক হয় শুনছি। পরে ওনাকে ডেকে আলাপ করলাম। জিগেস করলাম এত সব করার জন্য পয়সা লাগে সেটা কি ভাবে জোগাড় করেন। হেঁসে বললেন ওই আপনাদের মত লোকের সাহায্যে হয় যায়। ঠিক মনে নেই কত টাকা তখন দিয়েছিলাম কিন্তু ওনাকে আমার কার্ড দিয়ে বললাম আমার অফিসে আসুন দেখি একটা কিছু করতে পারি কিনা। ওই খান থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। সে বছর 1 লক্ষ টাকা কোম্পানি থেকে দেয়ার বন্দ বস্ত করে দিয়েছিলাম।পরে ওই অংক টা বছরে 2 লক্ষ করা হল, এখন 3 লক্ষ বছরে। তা ছাড়া আরেক কোম্পানি থেকে আটটা শিক্ষকের মাইনে এবং বাচ্চাদের জন্য বই খাতা পেন্সিল ইত্যাদি করে দেয়া হল। কমল যখনই আমার অফিসে আসে তখন আমি কর্পোরেট জগৎ থেকে অন্য জগতে চলে যাই। অফিসে শুভ্রা ওনার সব লেন দেনের কাগজ ঠিক করে দেয়। আমি ইংরেজি তে ছোট গল্প লিখি অনেক দিনের ইচ্ছে ঐগুল অনুবাদ বাংলায় করে বই বার করা। কমল আমার ঐ ইচ্ছাপূরণ করে দেয়। নিজে উদ্যোগ নিয়ে তিন টে বই 2018,2019 এবং 2020র বই মেলা তে প্রকাশ হয়।আমার ইচ্ছে পূরণ ও করে দিল। কমল গত আট বছরে প্রায় আমার অফিসে আসে জমিয়ে আড্ডা হয় না না বিষয় নিয়ে। বই প্রকাশের সময় কমলের সঙ্গে আমার স্ত্রী মাধুরীর আলাপ হয়। বই মেলাতে অভিযান publisher এর সামনে বেশ জমিয়ে আড্ডা। তারপর একটু দূরে আমরা সব কমল, গোপাল, শুভ্রা, মাধুরী চায়ের দোকানে যাওয়া চা আর সিঙ্গাড়া খাওয়া।সে এক অভিজ্ঞতা। মাঝখানে কোভিডের আগে শুভ্রা ভালো পাহাড় ঘুরে এলো কিন্তু আমার যাওয়া হয় উঠলো অনেক পরে।ওর মুখে ওখানকার বিষয় বেশ কিছু জানতে পারলাম এবং ভাবলাম টুক করে ঘুরে আসা যায়। কমল ততক্ষণে 30 লক্ষ গাছ লাগিয়ে ফেলেছে, ঝুড়ি ঝুড়ি এয়ার্ড আর লাইন কর বই মেলা ডিস্ট্রিক্টে ডিস্ট্রিক্টে attend করছে। শুধু ভাবি লোকটা টাটার ভাল চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভব ঘুরে চেহারা নিয়ে ওই রকম একটা রুক্ষ জায়গাটা কে গাছ পালা লাগিয়ে চেহারা পাল্টে দিয়েছে!বিয়ে করলনা, জীবনটা অন্যদের জন্য উৎসর্গ করে দিল।আর আমরা শুধু নিজেদের এবং নিজের বন্ধু বান্ধব relative নিয়েই ব্যস্ত, কতটা সময় আমরা দি গরিব দুস্থ দের জন্য। আমরা বেশির ভাগ আপনি বাঁচলে বাপেরনাম প্রিন্সিপলে চলি। আলাপ হবার পর থেকে আমি চেষ্টা করতে লাগলাম যাতে আমি কমলের কাজে আসতে পারি, ওই ওর পাওয়া পুণ্যের কিছুটা যদি পাই এই আরকি। শেষ মেষ 2021 নভেম্বর মাসের শেষ দিকে যাওয়া স্থির হল। আমি,মাধুরী, শুভ্রা আর আমার ড্রাইভার গোপাল। হৈ হৈ করে ইস্পাত চেপে ঘাটশিলা আর তারপর কমল যে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল সেটা চেপে 40 km রাস্তা।লাঞ্চ অব্দি পৌঁছেগেলাম। মনে মনে ভাল পাহাড়ের একটা ছবি এঁকে ছিলাম কিন্তু মিলল না। আসা করিনি ঐ রকম man made ফরেস্ট, সে এক বিশাল ব্যাপার। তারপর compound এ হাঁস মুরগি রাজ হাঁস ব্যস্ত হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা।আমরা খাচ্ছি ওরা টেবিল চেয়ারের তলায়।এ যেন জন্তু জানোয়ার সব এক। ওদের জন্য আলাদা করে জল খাবার সব রাখা। আমরা রুমে জিনিস রেখে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম।সেকি কমল নিজে আমাদের রুমে চেক ইন করালো আবার দেখছি ওই আমাদের ভাত ডাল তরকারি বেড়ে দিলো।কমল একাই আমাদের দেখা শুনা করে যাচ্ছে হাঁসি মুখে, মাঝে মাঝে ফাজলামিও করছে।এ যেন নিজের বাড়িতে বসে খাওয়া ।মোটা সেদ্দ চালের ভাত, টেল টেলে ডাল আর মাছ সবজি, কিন্তু ঐ পরিবেশে ওটাই সাভাবিক তাই বেশ তৃপ্তি করে খেলাম আমরা সবাই। বিকেলে আর পরের দিন সকাল মানুষের তৌরি জঙ্গল ঘুরে দেখা।শুধু গাছ আর গাছ, কত রকম। কমল নিজে গাছ গুলোর চারা নানা জায়গা থেকে জোগাড় করছে।দিশি বিদেশি সব রকম। শুভ্রা তার একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলল। আমরা বেশির ভাগ সময় dinning টেবিলে অথবা canopy র নিচে কমলের সঙ্গে আড্ডা মেরে কাটিয়ে দিলাম।কমল নিজের স্মৃতির ঝুড়ি থেকে নানা রকম সেলেব্রিটি র গল্প,তারপর সুনিল, শীর্ষেন্দুর, সমরেশ মজুমদারের আলাপের গল্প। গল্পে সিনেমা স্টার রাও এসে গেল। অপর্ণা, মিঠুন তাদের গল্প। এদিকে চার ডাক্তার তাদের বাচ্চাদের নিয়ে পৌঁছলো। তারা ঐ গরিব বাচ্চাদের হেলথ চেক up, স্পেশাল লাঞ্চের বন্দোবস্ত করে দিল। মাঝে মাঝে কমলের কাছে ফোন আসে ঘর খালি আছে কিনা গেস্ট হাউসে। এই সব দেখে আর দু দিন থেকে বুঝলাম লেখা পড়া জানা সুস্থ মস্তিষ্কের লোক আজকাল সার্থ ছাড়া কোন মনের মত মানুষ পায় না সুখ দুঃখের গল্প কিংবা কিছু পড়াশুনা নিয়ে গল্প। পলিটিক্স, সিনেমা, ক্রিকেট ছাড়া যে অন্য বিষয় নিয়ে গল্প করা যায় সেটা কমলের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর বুঝতে পারে।কেমন করে দুটো দিন কেটে গেল বুঝতে পারলাম না। ওখানে গিয়ে আরেক কমলকে পেলাম। ওকে আমি মজা করে বলি তোমার কোন রূপটা এখন দেখছি। বুঝলাম ভালোপাহাড় মানে ।গাছ কমল আর ওই বাচ্চারা। এত খ্যাতি পুরস্কার পাওয়া লোকটা ওই রকম সাদা সাপ্টা জীবন জাপন করে,কোন অহংকার নেই, নিজেকে উৎসর্গ করে দিল অন্য দের জন্য।সকাল থেকে চিন্তা 60 টা গরুর খাওয়া, গেস্ট হাউসের লোকদের দেখা শুনা, বাচ্চাদের পড়া শুনো খাওয়া, ওষুধ পত্র, গাছের চর্চা, একেবারে নিঃস্বার্থ ভাবে। তার মধ্যে আবার উপন্যাস, ছোট গল্প, কবিতা লেখা। পুজো সংখ্যার জন্য লেখা, ধারাবাহীক ম্যাগাজিনের জন্য লেখা। আশ্চর্য আছেতো মাত্র 24 ঘন্টা রোজ। তারপর ঘুরে ঘুরে টাকা তোলা ঐ এস্টাব্লিশমেন্ট কে চালিয়ে রাখার জন্য। আমি আমার জীবনে এমন মানুষ দেখিনি এবং শুনিওনি। আমার সেলাম কমল তোমাকে। আমি পাসে আছি।

Saturday, March 05, 2022

দুর্গা

দুর্গা
.....

আমার স্কুলের বন্ধু দুর্গা। খুব শৌখিন, চুলটা  পাফ করা।ও দেবানন্দের ভক্ত ছিল, কোনো সিনেমা মিস করত না। 
কিন্তু প্রচুর গুল মারত। অনেকে ওকে গুলবাজ দুর্গা বলত। ক্লাস 8 অব্দি আমার পাসে বসত।
অনেক মজার ঘটনা আছে কিন্তু আমি ওইগুলো এখন লিখতে চাই না।
আমি engineering পাস করে চাকরি করতে Indian Oil র রিফাইনারি তে গেলাম।ও এক স্কুলে ল্যাব আসিস্টেন্টর চাকরি নিলো আর বিকেলে দিল্লির কালী বাড়িতে জুয়া খেলতো।হ্যাঁ আমি দিল্লির Reading Road র Raisina School থেকে পাস করি।
অনেক দিন পর ওর সঙ্গে কালী বাড়িতে দেখা। ও আমাকে ওর বাড়ি নিয়ে গেল। ও আমাকে ওর পাসপোর্ট দেখালো এবং একটা ম্যাপ। ও বলল ও হিচ হায়েক করে খাইবার পাস দিয়ে জার্মানি যাবে। আমি ভাবলাম দুর্গা আমাকে মুরগি বানাচ্ছে, as usual গুল দিচ্ছে। আমি তখন ভাবতে শুরু করলাম ওকে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, হয়ে যেতে হবে, ভাবা যায় না।অনেক ক্ষন ওর সঙ্গে অন্য সব বিষয়ে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম ।
তারপর বেশ কয়েকটা বছর কেটে গেল।
এক পূজায় দিল্লি গেলাম, আমরা কালী বাড়ির খুব কাছেই গভেরমেন্ট কোয়ার্টার উইলসন স্কোয়ারে থাকতাম, আমার বাবা তখন ও retire করেনি।
কালী বাড়ি গেলাম স্ত্রী কে নিয়ে পূজ দেখতে।
মা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে কারো সঙ্গে কথা বলছে,ঠিক চিনতে পারলাম না।
মা আমাকে ডেকে বলল " দেখ একে চিনতে পারিস কিনা" 
দেখলাম একজন মোটা দড়ি বালা লোক, আমার দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠলো, ওই typical হাঁসি তে ধরে ফেললাম ও আমার পুরনো বন্ধু দুর্গা!
ও বলল আয় তোকে আমার German Girl friend র সঙ্গে আলাপ করিয়ে দি।
আলাপ হল, তার মানে ও শেষ অব্দি Germany গেছে ওর ওই hitch hike প্লান অনুযায়ি। 
ও স্বীকার করল এবং এও বলল যে ওই দেশের নিয়ম অনুযায়ী ও ওই German মেয়ের জন্য সিটিজেনশিপ পায়।
সেদিন ও আমাকে গুল মারে নি,ওই খাইবার পাস দিয়ে hitck kike করে জার্মানি পৌঁছায়।
ওকে জিগেস করেছিলাম 1972র Munich Olympics দেখেছে কিনা। ও হেঁসে বলল ও ত ম্যানুয়াল labour এর কাজ করে,ও অলিম্পিকস এর সময় বরফ ভাঙছিল। অন্য বিদেশ ফেরা লোকদের মত ও আমাকে কোন বড়লকি চাল মারে নি,যা সত্যি তাই বলেছে।
এর পর আর দুর্গার সঙ্গে দেখা হয় নি।