Tuesday, April 02, 2024

চোরের সেদিন আর এদিন

শহরতলীর একটি ছোটো রাস্তার পাশে তারপলিনে আর বাঁশ দিয়ে কোনো রকমে খাড়া করা চায়ের দোকান l খদ্দের বলতে গুটি কয়েক লুঙ্গি, কুর্তা, ধুতি , বারমুডা, জামা , হাফ কুর্তা টি শার্ট শার্ট পরা কতিপয় আধ বয়সি লোক, উস্কো ক্ষুস্ক চুল, খোঁচা খোঁচা দাড়ি - পুরানো দিনের চোররা চা এবং আড্ডার জন্য জড়ো হয় রোজ নিয়ম করে। সেদিন ও ওরা গেজাঁজছিল যখন একটা পুলিশ ভ্যান এল, ওরা তটস্থ হল, আমাদের ধরবে নাতো, যা দিনকাল পড়েছে, যখন তখন পুলিশ যাকে তাকে ধরে l

     ওদের ধডে প্রাণ এল, ঐ রেড ওদের জন্য নয়; পরিবর্তে, পুলিশ হ্যাকিংয়ের সন্দেহে কাছাকাছি একটি আইটি কোম্পানিকে লক্ষ্য করে কুচ কাওয়াজ করে ঢুকল। তার পর কয়কটা জোয়ান ছেলে মেয়ে কে বার করে আনলো l সবার পিঠে রুকস্যাক,যে রকম আজ কাল দেখা যায় ছেলে মেয়েদের পিঠে, দেখে মনে হয় কচ্ছপ দু পায়ে হাঁটছে l
আমাদের এই চোরেরা বুঝতে পারলো এরা সব হাকের, মনে হয় জামটারায় ট্রেনিং নিয়েছে l
হ্যাকার রা সব ভাল কাপড় জামা পরা আধুনিক ছেলে মেয়ে ওদের মত হাফ গেরস্থ ড্রেস নয় l
চুরির এই আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে চোরদের মধ্যে বেশ একটা জমাটি আড্ডা হল, তারা সবাই একমত হয়েছিল যে এই ধরণের চুরিতে কোনও রোমাঞ্চ নেই। শুধু আঙুল আর কমপিউটারের খেলা শারীরিক কোন শক্তির দরকার নেই, ছেলে গুল বেশির ভাগ দেখতে ভাল ছেলে টাইপ l নাদুস নুদুস চেহারা, চোখে চশমা l মনে হয় এক ধমক দিলে কেঁদে ফেলবে l
হ্যাকারদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি ছিল ঐ ছোট শহরে আলোচনার বিষয়।

আসুন দেখা যাক ওই চায়ের দোকানে এখন বিকেল বেলায় কি হাল চাল !

বিকেলের সূর্য তখন কনের গাছটার রাস্তা জুড়ে লম্বা ছায়া ফেলেছে, চায়ের দোকানটায় বেশ ভিড় অবশ্য সকালের চোরের গ্রুপটা তো ছিল তাছাড়া বেশ কিছু দিনের কাজ শেষ করে বাড়ী ফেরার রোজকার খদ্দের । তাদের মধ্যে গণেশ বসেছিল, মুখে বয়েসের রেখা, কোঁচকানো গাল এবং দুষ্টুমিতে জ্বলজ্বল করা চোখ,সে এক পাকা চোর। তার সঙ্গীদেরকে তার পূর্বপুরুষদের গল্প বল ছিল, ওরা বংশ পরম্পরায় চোর , অন্যরা ওকে সমীহ করে l

"আমার ঠাকুরদাই প্রথম এই পথে পাড়ি দেয়," গণেশ  জানালো , তার গলার আওয়াজে কি রকম যেন অহঙ্কার। তিনি একজন ছদ্মবেশে ওস্তাদ ছিলেন, তার শরীরটি আগা পাস্তলা তেল দিয়ে মেখে চুরি করতে বেরতেন l সরু জানালার সিকের মধ্যে দিয়ে পিছলে ঢুকতেন। হাতে দড়ি এবং ছোরা নিয়ে, তিনি ছায়ার মতো রাতে ঘোরাফেরা করতেন l কোনও দিন ধরা পড়েন নি "

অন্যরা নীরব শ্রদ্ধায় মাথা নাড়ল, সত্যি তখন হয়ত ব্রিটিশের সময় এবং নিশ্চয় সাহেবদের বাড়িতেও সিঁধ কেটেছেন, বলা যায় একজন সাচ্চা দেশ প্রেমী, সহেবদেরও মাত দিয়েছেন,তাদের  মাথা গণেশের ঠাকুরদার প্রতি শ্রদ্ধায় ঝুঁকে গেল ।
কিন্তু গণেশের আখ্যান কেবল অতীতে যাত্রা ছিল না; এটি ছিল চুরির বিবর্তনের একটি প্রমাণ - পরিবর্তিত সময়ের মুখে অভিযোজন এবং উদ্ভাবনের একটি গল্প।

"তারপর আমার বাবা এলেন," গণেশ তার গুষ্টির গল্পো চালিয়ে গেল, তার গলার স্বর একটি ষড়যন্ত্রমূলক ফিসফিস করে নামল। "তিনি আধুনিক বিশ্বের উপায়গুলিকে আলিঙ্গন করেছেন, সহজে লক-পিকিং এবং ক্র্যাকিং সেফের শিল্পে দক্ষতা অর্জন করেছেন। কোনও বোল্টই তার দক্ষতাকে চ্যালেঞ্জ দিতে  পারেনি, কোনও সেফ খোলার কোড ছিল জল ভাত তাঁর জন্য ।"

গণেশের গল্পতে একটা মাদকতা ছিল চোরের দের জন্য । অজানা লোভনীয় ইশারা- এমন এক জগৎ যেখানে সীমানা ঝাপসা হয়ে যায় এবং বৈধতা ও অবৈধতার মধ্যকার রেখাটি আরও ক্ষীণ হতে থাকে।
এক জন বলে উঠলো সত্যি সে সব চুরির ঘটনা  ভাবলে লোম খাড়া হয় যায় l ঘুট ঘুট রাত্তির, বেশির ভাগ অমাবস্যার রাত্তির গ্রামে চুরি করতে বেরতাম l এক দিকে ধরা পড়ার ভয় আর অন্য দিকে ভূতের ভয় l আমিত হনুমান চালিসা নিয়ে বেরোতাম l শুনে সবাই হো হো করে হেঁসে উঠল l
আড্ডাটা বেশ জমে উঠেছিলো l
পচা বলে উঠলো দেখলি ছেলে মেয়েগুল কি রকম রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে যাচ্ছিল , আমরা তো কোমরে দড়ি বাঁধা থাকলেও বুক ফুলিয়ে যেতাম l জানতাম সরকার কদিন আর আমাদের বিনে পয়সায় খাবার দেবে, ওদের বাজেট আছেনা তাই দু তিন দিন পরে ক ঘা দিয়ে ছেড়ে দিত l
আর যদি পুলিশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতাম তো কিছু দূরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিত আর বলতো কদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকবি l
এখন অবশ্য ওরা সব পার্টি করে তাই পুরোনদিনের গল্প ওদের কাছে এক বিরাট সম্বল !

1 comment:

Pralay said...

Bha.Inovative story